| |
               

মূল পাতা সারাদেশ জেলা চুয়াডাঙ্গায় হাদিস অস্বীকারের অভিযোগে এক ব্যক্তি সমাজচ্যুত


চুয়াডাঙ্গায় হাদিস অস্বীকারের অভিযোগে এক ব্যক্তি সমাজচ্যুত


জেলা প্রতিনিধি     01 December, 2025     01:03 PM    


চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার ছোট শলুয়া গ্রামে ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান নামাজ নিয়ে বিভ্রান্তিকর মত প্রচার এবং হাদিস অস্বীকারের অভিযোগে স্থানীয়রা সমাজচ্যুত করেছেন মুহাম্মদ রবিউল ইসলামকে। স্থানীয়দের দাবি, রবিউল দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করছিলেন, নামাজ দুই ওয়াক্ত। এছাড়া তিনি প্রকাশ্যে জানাচ্ছিলেন, হাদিস মানেন না।

আলেমরা জানিয়েছেন, তাকে বহুবার তওবা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

গত শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর একপর্যায়ে ছোট শলুয়া কুমিল্লাপাড়া জামে মসজিদে বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মসজিদ কমিটি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিউল ইসলামকে সমাজচ্যুত করা হয়।

ঘটনার পর ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেলেও অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী বিষয়টিকে অন্য দিকে নিতে চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত রবিউল আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর তিনি নীরব থাকলেও, স্থানীয়দের দাবি, গত ৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর এক অভিযানে অস্ত্রসহ আটক হওয়ার পরও তিনি ‘হঠাৎ করে’ মুক্তি পান। এরপর থেকেই তিনি ধর্মীয় বিষয়ে বিভ্রান্তিকর মত ছড়াতে শুরু করেন বলে অভিযোগ।

সমাজচ্যুতির পরদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী নাকি তাকে নিজেদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় কথাকাটাকাটি হয়, আলেমদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়, এমন অভিযোগও রয়েছে।

নুরুল ইসলাম সিকদার নামে এক ব্যক্তিকে, এই ঘটনার ভিডিও করতে গেলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মুহাম্মদ আলমগীর হুসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিল। তাকে তওবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় সমাজের সিদ্ধান্তে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তার অভিযোগ, সাধারণ মুসল্লিরা সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেও, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি বিষয়টিকে অন্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। তারা জানেন, এ সিদ্ধান্ত ধর্মীয় কারণে, রাজনৈতিক কারণে নয়।

তিনি আরও দাবি করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত কিছু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মী এক বৈঠকে আলেমদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। নুরুল ইসলাম যখন ভিডিও করেন, তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করা হয়।

নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, চায়ের দোকানের সামনে ১৫–২০ জনকে হুজুরকে গালাগালি করতে দেখি। ঘটনা প্রমাণে ভিডিও করতে গেলে তাকে দোকানের ভেতরে টেনে নিয়ে ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ভিডিও মুছে ফেলা হয়। তাকে অশালীন ভাষায়ও গালাগালি করা হয়। তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন।

সমাজচ্যুত রবিউল ইসলাম দাবি করেন, তার ওপর ‘জুলুম’ হয়েছে। তিনি চান, একলা ইমামের কাছে গিয়ে তওবা করতে। কিন্তু সবার সামনে তওবা করতে বলা হয়। এটা তার কাছে ‘অপমানজনক’ মনে হয়েছে।

নামাজ দুই ওয়াক্ত ও হাদিস অস্বীকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে রবিউলের বক্তব্য, তিনি আগে কুরআন মানেন, পরে হাদিস। স্থানীয় আলেমদের তিনি চ্যালেঞ্জ করেন, “সাঁইজি সাহেবের কাছে গিয়ে দলিল দেখিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত প্রমাণ করতে পারলে আমি মানবো।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তেজনা রয়ে গেছে। গ্রামবাসীর আশঙ্কা, ধর্মীয় বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখালে আবার অশান্তি তৈরি হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, রবিউল ৩–৪ বছর ধরেই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলে আসছেন। এটা নতুন কিছু নয়।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে আলেমরা বলেন, ফেরত নেওয়া যাবে না। কিন্তু রবিউল নাকি দায়িত্ব নেন ‘সমাধান করে দেবেন’। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে আগে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না। সমাজচ্যুতির পর তারা একত্রিত হয়ে তাকে নিজেদের সমাজে নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।

তার ভাষায়, “বিষয়টা রাজনৈতিক না ধর্মীয়, একজনকে ধর্মীয় কারণে সমাজচ্যুত করা হলো, আর তাকে অন্য সমাজে নেওয়ার ঘোষণা, এটা কি গ্রহণযোগ্য?”

দর্শনা থানার ওসি সুলতান মাহমুদ বলেন, ধর্ম নিয়ে অবমাননা বা অপব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাটিরাঙ্গা শাহী মসজিদের খতিব মুফতী শামীম হুসাইন ফারুকী বলেন,  কেউ ইসলামের স্পষ্ট ফরজ বিধান অস্বীকার করলে দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়। তিনি সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন, যে ধর্ম থেকে ফিরে যায় এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তার সব নেক আমল বরবাদ হয়।

তিনি বুখারী ও তিরমিজির হাদিস দিয়ে বলেন, এ ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং বয়কট করাও নির্দেশ আছে। এমনকি তার বিবাহও বাতিল হয়ে যায়, ফিকহের ব্যাখ্যা অনুযায়ী।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, কেউ যেন নিজ হাতে আইন না নেয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাই কাম্য।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: খুলনা চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা সদর